পৃথিবীব্যাপী উন্নত দেশসমূহে কোন অপরাধ সংগঠিত হলে সেসব দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ঘটনার চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ করে। প্রতিটি পসিবল উপকরণ ক্ষতিয়ে দেখে। উন্নত সব প্রযুক্তির ব্যবহার করে। এরপর তারা অপরাধী সনাক্ত করেন। কয়েক ধাপে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে। ক্রস চেক করে প্রতিবেদন দেয়।
এতে সময়, অর্থ, মেধা ও শ্রম দিতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে আমাদের দেশের বাহিনী এ ক্ষেত্রে আরও এক্সপার্ট! তারা যাকে তাকে ধরে নিয়ে চোখে কালো কাপড় বেঁধে পাছার উপরে উত্তম মাধ্যম দিয়েই অপরাধী সনাক্ত করে ফেলেন। এরপর হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মিডিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে লম্বা ব্রিফিং করেন। সুন্দর সুন্দর গাল গল্প বলে গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদের রসদ জোগান। আর সংবাদকর্মীরা কোন রকম যাচাই বাছাই ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হর্তাকর্তাদের কোড করে বড় বড় শিরোনামে নিউজ করে দেন। কখনো কখনো আবার জুড়ে দেয়া হয় ছবি
আদালতে অপরাধী প্রমাণের আগে এভাবে কাউকে ভিকটিমাইজড করা কি আইনসম্মত? আদালতে ওই ব্যক্তি নির্দোশ প্রমাণিত হলেও তার আগেই সামাজিক মান মর্যাদা সব ধুলোয় মিশে যায়।
এইযে র্যাব মাকে হত্যার দায়ে ছেলেকে আটক করে যে গল্প সাঁজালো পুলিশের তদন্তে দেখা গেলো ভিন্ন কাহিনি। চিন্তা করুন, একটা ছেলেকে কি পরিমাণে টর্চার করলে মাকে হত্যা করে কেটে ডিপ ফ্রিজে রাখার মিথ্যে স্বীকারোক্তি নেয়া যায়?
এইযে র্যাবের পেসক্রিপশনে দেশের সব গণমাধ্যমে ওই ছেলেকে ভয়ংকর অপরাধী হিসেবে তুলে ধরা হলো, ছবি দিয়ে ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হলো- এরফলে ওই ছেলেটার যে সামাজিক ক্ষতি হলো এর দায়ভার কে নেবে? ওই ছেলেটার সামজিক মান মর্যাদা কি আর ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওইসব সদস্যদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে? এমন উদাহরণ দেশে খুব কম। এসব সদস্যদের উচিত ছিল তাৎক্ষণিক সাসপেন্ড করে গ্রেফতার করা।
পুলিশ তদন্ত করে যে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে আমাদের দেশের গণমাধ্যমের উচিত ছিল এই কাজটাই। এটাই মূলত সাংবাদিকতা। আর এটাই সাংবাদিকদের কাজ। কিন্তু আমরা সেটা করিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্রিফিংয়ের গাল গল্প লেখা সাংবাদিকতা নয়। ব্রিফিংয়ের নামে মিডিয়া ট্রায়ালে মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা উচিত সংস্থাগুলোকে। সাংবাদিকদেরও উচিত এসব শ্যূটিং কাভার বন্ধ করা।
র্যাবের জড়িত সদস্যদের ভিটে বাড়ি জমিজমা যা আছে সব বিক্রি করে সাদকে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাই। যাতে ভবিষ্যতে এসব কাজ করার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কলিজা কাপে। এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
Leave a Reply