রাজধানীতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রয়েছে কঠোর নির্দেশনা। আর সে অনুযায়ী চলছে বিশেষ অভিযানও সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় কর্মকর্তা ডাকাত সদস্যদের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ডাকাতি করা গরু বিক্রয়ের ৭০ হাজার টাকা ! এরকম অভিযোগ উঠেছে শাহআলী থানার দুই (এএসআই) এর বিরুদ্ধে। অথচ নানা অপরাধ, অনিয়ম, দুর্নীতি প্রতিরোধে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনীর অন্য সদস্যসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। কতিপয় পুলিশ সদস্যদের এরকম কর্মকান্ডের কারণে পুলিশের প্রতি আবার অন্য মন মানসিকতার তৈরি হচ্ছে জনমনে। জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় ৯টি গরুসহ ট্রাক ডাকাতি হয়। ডাকাতির দুটি গরু মিরপুরের শাহআলী থানার গুদারাঘাট এলাকায় রাখা হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে এক ডাকাতকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে দুইটি গরু বিক্রি করিয়ে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে নেন শাহআলী থানার দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ ও মজিবুল । বাড়তি ১০ হাজার টাকা নিয়ে দেন তাদের সোর্সকে।
কলাবাগান থানা সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর রোড রাসেল স্কায়ার এলাকা থেকে গরুসহ ট্রাক ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয় যার মামলা নং- ৩ তারিখ- ৯/১/২০২৫। মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ এ ঘটনায় গত ১০ জানুয়ারি ভোর ৬:৩০ দিকে ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য রিয়াজ গোলদারকে শাহআলী থানা এলাকা থেকে লুণ্ঠিত পিকআপ সহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৬ জানুয়ারি শাহআলী থানার গুদারাঘাট এলাকা থেকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ফয়সালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩১ জানুয়ারি (২০২৫) ভোলা জেলার দুলারহাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মেহেদী হাসান (রনি) দালালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার তথ্যমতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আরও দুই ডাকাত সদস্য সোহেল ও ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কলাবাগান থানা-পুলিশ।এনিয়ে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির মামলায় এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং লুন্ঠিত পিকআপ ও একটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সোহেল নামে এক অভিযুক্ত ডাকাত আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সেখানে মিরপুর শাহআলী থানার দুই পুলিশ সদস্যকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ডাকাতদের বক্তব্যসহ একাধিক ভিডিও ফুটেজে সোহেল বলেন, গত ৮ জানুয়ারি একটি পিকআপে করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ১০ থেকে ১২ জনের ডাকাত দল ঢাকার রাস্তায় বের হয়। এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল বুক কাটা সুমন। তারা মিরপুর রোডে একটি গরুর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অস্ত্র হাতে গাড়ির চালক ও হেলপারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে যায়। তখন গাড়িতে ৯টি গরু ছিল। গাড়িটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে শাহআলী থানার নবাবেরবাগ এলাকায় নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা গরুগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ডাকাত দলের সদস্য হযরত আলী ও নেওয়াজ নিয়ে যান পাঁচটি গরু, সোহেল নেন দুটি গরু। আর বাকি দুটি গরু নিয়ে যান সুমন ওরফে বুক কাটা সুমন।
সোহেল দুটি গরু নিয়ে তার বাসায় রাখেন এই তথ্য আলম নামের এক অভিযুক্ত ডাকাত শাহআলী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ ও মজিবুলকে জানিয়ে দেয়। থানার ওই দুই এএসআই সোহেলের বাসায় গরু থাকার সত্যতা জেনে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘১ লাখ টাকা না দিলে সোহেলকে গরুসহ গ্রেপ্তার করবেন। তখন সে গরু বিক্রি করে দুই এএসআইকে ৭০ হাজার ও পুলিশের সোর্স ইসলামকে ১০ হাজার টাকা দেন। পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে সোহেলকে গ্রেপ্তার করলে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিড়িয়াখানার রোডের সাহেব আলির বাসা থেকে ডাকাতি হওয়া একটি গরু উদ্ধার করে।
এবিষয়ে মামলার বাদী মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মাংস ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান (৩৫) সাংবাদিকদের বলেন, আহমেদ রাজা (৩৫), কাজী আনোয়ার হোসেন (৫৭) ও আব্দুল লতিফ প্রত্যেকে ‘আমরা সবাই মাংস ব্যবসায়ী। কয়েকজন মিলে গাবতলী থেকে গরু কিনে পরিচিত রাখাল দিয়ে পাঠিয়ে দিই। ঘটনার দিনেও আমরা ১১টি গরু কিনেছিলাম এর মধ্যে দুটি গরু রাখাল পৌঁছে দিতে পেরেছিল। বাকি ৯টা গাড়িসহ ডাকাতি হয়ে যায়। দেড় মাস পর পুলিশ দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে এবং এক আসামির দেওয়া তথ্যে একটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।’ মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমার শাহআলী থানার দুই পুলিশের সংশ্লিষ্টতা জানতে পেরেছি।’ মেহেদী বলেন, ‘আমাদের ৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশ জড়িত জেনে আমরা হতভম্ব।’
ডাকাতের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহআলী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদ হাসান “আজকের কাগজকে” বলেন, ‘সোহেল নামের কারও বাসায় যাইনি’। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনি থানায় আসেন, সাক্ষাতে কথা বলি।’ এএসআই মজিবুল ও সোর্স ইসলামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘মজিবুল আমাদের থানারই। ইসলাম নামে কাউকে চিনি না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই মজিবুল হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টাকরে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।” এ ঘটনায় শাহআলী থানার দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে দু’জনকে সাময়িক ক্লোজ করে মিরপুর উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
গরু ডাকাতির ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই জীবন “আজগের কাগজকে” বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে”। “ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে”। এ সময়ে একটি পিকাপ ও একটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে”। বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, এবং শাহআলী থানার দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
শাহআলী থানার দুই এএসআই ডাকাতি করা গরুতে ভাগ বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাকসেদুর রহমান “আজকের কাগজকে” বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে ক্লোজ করে ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ” অভিযুক্ত দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি”।
Leave a Reply