রাজধানী মিরপুরে ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে আর এসকল চাঁদাবাজি বন্ধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হয় পরে দেশের আইনশৃঙ্খলার। লম্বা সময় ধরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে ছিল না পুলিশ। এখনো শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসেনি সেই আইন-শৃঙ্খলা। আর এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মিরপুরের চাঁদাবাজ চক্রটি। পরিস্থিতি শতভাগ স্বাভাবিক না হওয়ার ফলে মিরপুর ১ নম্বরে ফুটপাত কেন্দ্রিক নিরব চাঁদাবাজি বেশি বেড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পরে ব্যবসায়ীরা। সরকারের পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি হাত বদল হয়েছে ফুটপাতের চাঁদাবাজদের।
এ সকল চাঁদাবাজদের অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ৫”ই আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে ফুটপাতের হকারদের অভিযোগ ও ব্যবসায়ীদের আক্ষেপের কথা তুলে ধরে গত ২৬ অক্টোবর শনিবার ২০২৪ তারিখে “আজকের কাগজের” অনলাইন সংস্কারে মিরপুরের ফুটপাত দখল করে মার্কেট কমিটির চাঁদাবজি বন্ধ হবে কি? এই শিরোনাম সহ গুরুত্ব সহকারে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর অতি দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রকাশিত সংবাদটি সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে আসার পর ফুটপাতের চাঁদাবাজদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হয়।তারই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারির ভিত্তিতে মিরপুর ১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে চুরিপট্টির গলিতে শুক্রবার অভিযান পরিচালনা করে ফুটপাতের চাঁদাবাজ কামালকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনীর দারুস সালাম ক্যাম্পের চৌকস টিম।সেনাবাহিনীর দারুস সালাম ক্যাম্প থেকে গতকাল শুক্রবার ১”ই নভেম্বর রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চুরিপট্টির গলিতে অভিযান পরিচালনা করে ফুটপাতের চাঁদাবাজ কামালকে আটক করতে সক্ষম হওয়ার এ সকল তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আরও জানানো হয়, রাজধানীর মিরপুর-১ মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে চাঁদাবাজির ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে সেনাবাহিনী সেখানে গোয়েন্দা নজরদারি চলমান রাখে এবং চাঁদাবাজির পেছনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে তৎপর হয়। চাঁদাবাজির এই তাণ্ডবের ফলে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ী মহলের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চাঁদাবাজ চুরিপট্টির কামালকে সনাক্ত করা হয়। কামাল দৈনিক বিভিন্ন দোকান হতে অবৈধভাবে ২৫-৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। এই চক্রের মূল হোতা কবির নামক জনৈক ব্যক্তি। কোন ব্যবসায়ী চাঁদা প্রদানে অনীহা প্রকাশ করলে কবীর ও কামালের লোকদের মাধ্যমে প্রত্যেককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হত।
এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, কবির এলাকার একচ্ছত্র প্রভাবশালী ব্যক্তি সেনাবাহিনী এই ব্যক্তির পূর্ববর্তী কার্যকলাপ এবং চলাফেরা যাচাই করলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ নেতা নিখিলের সাথে কাজ করছেন যানা যায়। তাদের এই তৎপরতায় মিরপুর-১ এলাকায় একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ছোট ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী কেউই চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পাননি। এই শক্তিশালী চাঁদাবাজ চক্র স্থানীয় জনগণকে দমিয়ে রেখেছে, যারা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি অনেকে।
এখন সেনাবাহিনীর এই তৎপরতায় চাঁদাবাজি চক্রের মূলহোতাদের নাম ও তথ্য উঠে আসায় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী মহল কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নিরলস প্রচেষ্টায় এই চক্রের মূলোৎপাটনের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং অচিরেই কবীরসহ সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে চুরিপট্টি গলির চিহৃিত চাঁদাবাজ কামালকে শাহআলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে শাহ আলী থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply