অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় লিবিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় মিলেছে।তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর ও মুকসুদপুর উপজেলায়।
এই ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে এ ব্যাপারে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। আর নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ইতালিতে যাওয়ার পথে নিহতরা হলেন, রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈ, সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের সাগর বিশ্বাস, গোবিন্দপুরের ইনসান শেখ ও আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের অমল কীত্তনীয়া, একই গ্রামের অনুপ সরদার, শাখারপাড়র গ্রামের সজিব মোল্লা, সাতবাড়িয়ার রাজীব। এদিকে, মুকসুদপুর উপজেলার চরপ্রসন্নদী গ্রামের আশিক শেখ ও একই গ্রামের সত্তার খন্দকার।সবার বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে।
স্বজনরা জানিয়েছে, দালালদের খপ্পড়ে পড়ে গতবছরের জানুয়ারি মাসে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলাদার। তার সঙ্গে মামা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকনও যোগ দেন। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করেন তারা। মাঝপথে ভুমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারায় মামা আবুল বাশার ও তার ভাগ্নে টিটু। আজ সোমবার সকালে মৃত্যুর খবর আসলে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
স্বজনরা আরও জানিয়েছে, এই ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ ও মুকসুদপুরে ২ জনসহ ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড। এই ঘটনায় মূলহোতা রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দির বেজেরবাড়ির এলাকার মনির শেখ ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল, রাজৈর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাস, মুকসুদপুরের রাঘদী ইউনিয়নের মোল্লাদী গ্রামের শহিদ মোল্লা ও একই ইউনিয়নের শ্রীযুতপুর গ্রামের বাবু হাওলাদার। এই ঘটনায় জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা। এর পাশাপাশি নিহতের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
নিহত আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, ‘মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার এই দুই দালাল ২৮ লাখ নিয়েছে আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে। কিন্ত আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালদের কঠোর বিচার চাই।’
টিটু হাওলদারের চাচাতো ভাই রেজাউল হাওলাদার বলেন, ‘দালালে লোভ দেখাইয়া আমার ভাইকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিবে কখনই তা ভাবতে পারিনি। দালালের কঠিন বিচার চাই। আর আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’
নিহত সত্তার খন্দকারের ভাই আবুল খায়ের জানান, ‘ইতালি যাওয়ার জন্য অনেক ধারদেনা করে দালাল শহিদ মোল্লাকে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার ভাই যে এভাবে মৃত্যুর মুখে দিবে তা কখনো ভাবিনি। আমি এই দালালের বিচার চাই।’
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ খান বলেন, ‘ইতালি যাবার সময় লিবিয়ায় রাজৈর উপজেলার ১০ যুবক মারা গেছে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নিহতদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত ওয়ারেন্টভুক্ত দালালদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, ‘নিহত ১০ জনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
Leave a Reply