রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির তাগিদ দিচ্ছে যখন বিএনপি আর সেই সুজোগে রাজনীতির মাঠে এখন হাইব্রিড নেতারা স্বর্গম ! দলের ভেতরে হাইব্রিড অনুপ্রবেশের কারণে পাল্টে যাচ্ছে বিএনপির তৃণমূলদের মাঠের চিত্র। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছে, হাইব্রিডদের চাপে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে দুর্দিনের মাঠ পর্যায়ের মিটিং মিছিলে থাকা ত্যাগী নেতারা। হাইব্রিডদের চালচলন দেখে মনে হয় তারাই এখন দলের সবকিছু ! “আন্দোলন সংগ্রামে দুর্দিনে যারা মাঠে ছিলেন না, তারাই এখন নেতা সেজে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন ! আর ত্যাগীরা রয়েছেন কাতারের অনেক পেছনে। এমন নানা হতাশা কারণে অনেক ত্যাগী নেতারা তাদের রাজনীতি গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
আন্দোলনে মাঠে ছিলেন না, মামলা-হামলা কিংবা নির্যাতনের মুখেও পরেননি, ঘরছাড়াও হতে হয়নি অনেককে। বিগত দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন ভাল ভাবে। তাল মিলিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি মন্ত্রীদের সঙ্গে। তারাই এখন বিএনপির দাপুটে ‘হর্তাকর্তা’ ! তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন অনুপ্রবেশকারী নব্য বিএনপি নামধারী অনেকে। যারা কখনোই বিএনপিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না ! তারাই এখন নানা জায়গায় দখল পর্বে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আবার তারাই এখন তৃণমূলের ত্যাগীদের ওপর নাটাই ঘোরাচ্ছেন প্রভাব বিস্তার করছেন। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের অলিগলিতে এখন তাদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার শোভা পাচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে এসব হাইব্রিড নেতার পদচারণাও বাড়ছে ! ভিড় করছেন বিভিন্ন লবিং-তদবির নিয়ে।
অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যেসব নেতাকর্মী রাজপথের মিছিল মিটিংয়ে ছিলেন, মামলা-হামলায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন তারাই এখন দলে ভেতরে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতাদের দাপটে ‘অসহায়’। হাইব্রিড এসকল নেতাদের চাপে ত্যাগীদের অনেকেই এখন দলীয় কার্যালয় সহ নেতাদের বাসাবাড়ি এড়িয়ে চলছেন। দলের ভেতরে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও গ্রুপিং আর একে অন্যের উপর অহেতুক মিথ্যা অভিযোগে বহিষ্কার আতঙ্ক নিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন আবার অনেকে। হাই কমান্ডের অনেকেই বলছেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী। স্বৈরাচারী দলটির নেতাকর্মীরা এখন খোলস পরিবর্তন করে বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীকে সতর্ক করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে আওয়ামী সরকারের আমলে সীমাহীন নির্যাতনের মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে থেকেছেন। অনেকে গুম হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দলের এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। অনেকের বিরুদ্ধে মামলার তিন সেঞ্চুরিও পার হয়েছে বিগত দিনে। এসব মামলায় সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে তাদের। অনেকের সহায়-সম্পদ দখল করা হয়েছে, অনেককে ঘরবাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে। তবে যেসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছেন, তারা ছিলেন বহাল তবিয়তে। ওই সময়ে তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা করেছেন, নিরাপদে থেকেছেন। কোনো নির্যাতন তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। তারা সব সময়ই বিভিন্ন লবিং-তদবিরে পদ বাগিয়েছেন। আর এখন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাই দলের সামনের সারিতে চলে এসেছেন। এটা শুধু বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দল-সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যেও বিস্তার করেছে।
সাংবাদিক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্যান্য পেশার মধ্যেও দৌরাত্ম্য বেড়েছে বিগত দিনের নিষ্ক্রিয়দের। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে একসময় পুরো দলকে এর চরম খেসারত দিতে হবে বলে শঙ্কিত বিএনপির নেতারা।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বারবার তাগিদ দিচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আবারও সতর্ক করে বললেন, জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ না করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন,”মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে, কোনো স্বৈরাচার দলে প্রবেশ না হয় সেদিকে সজাগ থাকুন এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন। ‘জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে হবে আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণের পাশে যাওয়া জনগণের সাথে থাকা ও জনগণকে ভালবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করা।
Leave a Reply