রাজধানী মিরপুরে ফুটপাত দখল করে বিগত সরকার আমলে হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজী করতো একটি মহল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এ সকল চাঁদাবাজরা কিছুদিন গাঁ ঢাকা দিলেও এখন তারা আবার সজাগ হয়ে উঠেছে। স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও তার দোসররা এখনো চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে নিরবে!
মিরপুর এক নাম্বার মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে বসা হকার ও দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করছে লেয়াকতের নেতৃত্বে জুয়েল মুন্সি ও চুড়িপট্টির কামাল। এর আগেও এ সকল ফুটপাতের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনের ফুটপাত দখল করে বসা হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন জুয়েল মুন্সী ও চুড়িপট্টির কামাল বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদার টাকা তুলছেন। পরিচয় গোপন করে সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে পাওয়া গেছে তার প্রমানও ! বিভিন্ন দোকান ঘুরে নানা কৌশলে প্রকাশ্য তাদেরকে চাঁদার টাকা আদায় করতে দেখা যায়।দোকানিরাও নিরুপায় হয়ে নির্বিঘ্নে ঝামেলা মুক্ত দোকান পরিচালনা করতে নিরবে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে কাঙ্খিত সেই চাঁদার টাকা।এভাবেই পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন মার্কেটের চারপাশের ফুটপাতের কয়েক শতাধিক ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
সড়ক দিয়ে যাতায়াতরত পথচারীরা বলেন, পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতির কারনে ফুটপাত দখল মুক্ত হচ্ছে না!আর নিরবে এই চাঁদাবাজরা তাদের চাঁদাবাজির রাজত্ব করে যাচ্ছে। আর হকাররা বলছে, এখানে চাঁদা দিয়েই তাদেরকে দোকানদারি করতে হয়! চাঁদা না দিলে তাদেরকে দোকান করতে দেওয়া হয় না নেমে আসে নির্যাতন। না হয় নানা কৌশলে হয়রানি করে উঠিয়ে দেওয়া হয় দোকানপাট ফেলে দেওয়া হয় দোকানে থাকা নানা সামগ্রী।
সূত্রে জানা গেছে, জুয়েল মুন্সী সাবেক সংসদ সদস্য আগাখাঁন মিন্টুর অনুসারী হয়ে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে আগাখাঁন মিন্টুর ক্ষমতার পালা বদল হলে এমপি নিখিলের সাথেও আঁতাত করে তার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ওই এলাকার যখন যে সংসদ সদস্য হয়ে আসে তখন জুয়েল মুন্সী তাদের অনুসারী হয়ে যায় এবং চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণে নেন। এখন মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ডিরেক্টর পরিচয় দানকারি মোহাম্মদ লিয়াকতের আস্থাভাজন হওয়ায় অদৃশ্য শক্তির বলে তার ইশারায় জুয়েল মুন্সি ও চুড়িপট্টির কামাল এ কাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, তত কালীন সময়ে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিতেন জুয়েল মুন্সী ও কামাল। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা শান্তি মত ব্যবসা ও বসবাস করতে পারেনি! এখন জুয়েল মুন্সী ও কামাল তাদের বিশাল বাহিনী নিয়ে সার্বক্ষণ চাঁদাবাজী সহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও জানান, গত ৪ আগস্টে মিরপুর ১০ নাম্বারে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে সমাবেশ চলাকালীন সময়ে প্রায় ২/৩ শতাধিক লোক নিয়ে সেখানে সমাবেশে উপস্থিত হয় জুয়েল মুন্সী। তার বাহিনীরা ধারালো অস্ত্র, লাঠি সোটা নিয়ে সেখানে সে মহড়া দেয়। এ ছাড়াও বিগত সরকারের আমলে মিরপুর এক নম্বর সহ বিভিন্ন এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছে তারা এখনো চলছে তাদের নিয়ন্ত্রণে ফুটপাতে চাঁদা তোলার কাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জুয়েল মুন্সি ও তার বাহিনী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ফুটপাতে চারপাশের কালেকশনের টাকা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সভাপতি মোহাম্মদ তৈয়বের ভাই লেয়াকতের নিকট জমা দেন পরে সে টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। এবং তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের নিয়ম পরিপন্থী সকল অনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে থাকেন।
হকাররা আরও জানায়, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ডিরেক্টর পরিচয়ে মোহাম্মদ লিয়াকত বিভিন্ন সময়ে প্রসাশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে থাকেন চাঁদাবাজির মেইন সিন্ডিকেটের হোতা তিনি। তার নির্দেশ ও সহযোগীতায় জুয়েল মুন্সী ও কামাল এ সকল টাকা তোলার কাজ করে থাকেন। ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের পরে অনেকদিন এই এলাকার কালেকশনের চাঁদা বন্ধ থাকে এখন আবার নতুন ভাবে দোকানে দোকানে গিয়ে ২০০০ টাকা করে মার্কেটের জমিদারী টাকা দাবি করছে। প্রত্যেক দোকানদারের নিকট হইতে কামাল ও জুয়েল মুন্সী নিজেও প্রতিদিন মার্কেটের টাকা তোলে এবং তার বাহিনী সদস্যদের দিও টাকা তোলা হয়। একধিক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আগেও যেভাবে চাঁদা নিত কিছু দিন বন্ধ থাকলেও এখনো সেইভাবে চাঁদা দিতে হয়! মনে করেছিলাম সরকার পতন হয়েছে এখন আমারা চাঁদাহীন ভাবে ব্যবসা করব কিন্তু স্বৈরাচার দোসরদের কারণে এখনো চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। লিয়াকত ও তৈয়ব মিয়া বিভিন্ন কৌশলে নানা অজুহাতে জুয়েল মুন্সী ও কামালদের মত লোক দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। ব্যবসায়ীরা আক্ষেপ করে বলেন, শুধু সরকার পতন হয়েছে কিন্তু চাঁদার পতন হয়নি। মার্কেটের সামনে ব্যবসা করতে হলে তাদেরকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হবে তা না হলে ব্যবসা করতে দিবে না জানায় হকারা।
এ ব্যাপারে জুয়েল মুন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা আমাকে মার্কেটের ফুটপাতে টাকা তোলার দায়িত্ব দিয়েছে তাই টাকা উঠাই। এ ব্যাপারে মার্কেটের সভাপতি মোহাম্মদ তৈয়বের সাথে যোগাযোগ চেষ্টাকরে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ি যায়। তবে মার্কেটের ডিরেক্টর পরিচয় দেয়া মোহাম্মদ লিয়াকত সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদাবাজীর বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, জুয়েল মুন্সীকে আমি চিনি তিনি দারোয়ানি টাকা তোলে! আমরা কাউকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব দেইনি এবং কাউকে চাঁদা তুলতে বলিনি। চুড়িপট্টির গলিতে কামাল দোকান গুলো থেকে কিসের টাকা নিচ্ছি তা আমরা জানা নেই! আর জুয়েলকে বারতি কোন টাকা পয়সা তুলতে বলা হয়নি। তারপরও আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে জুয়েল মুন্সী যদি টাকা উঠায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজর দারী হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে কোন সময়ে গ্রেফতার করা হতে পারে।
Leave a Reply